নিজস্ব প্রতিনিধি :
সিমাহীন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইওকে) মোশারফ হোসেনকে অবশেষে বদলী করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরের ও অধিক সময় ধরে তিনি এ পদে ন্যাস্ত ছিলেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সাধারণত ২ বছর পর বদলীর নিয়ম থাকলেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এ পদে একই জায়গায় প্রায় ৭ বছর চাকরি করাটা রহস্যজনক।
তার পরেও মোশাররফের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার সহ শক্ত অভিযোগ থাকার পরও অদৃশ্য কারণে তিনি বদলী হতেন না কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতর কেন শাস্তিমুলক ব্যাবস্থা নিতে হিমশিম খেতে হতো দীর্ঘদিন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।
ফলে এবার তাঁকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ির গুইমারায় পদায়ন করা হয়েছে। তবে এ বদলী শাস্তিমুলক বলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্ভর দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রশাসন-১ এর উপসচিব তাসনুভা নাশতারান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ১২ সেপ্টেম্ভর/২৪ এর ভিতর পদায়নকৃত নতুন কর্মস্থলে যোগদান নতুবা স্ট্যান্ড রিলীজ হিসাবে গন্য হবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সময় জেলার রায়পুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেকুর রহমানকে এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে আদেশ দেয়া হয়।
স্থানীয় একটি বিশস্থ সুত্রের দাবী, বিগত আঃলীগ সরকারের সময়কালে স্থানীয় সাংসদ সদস্য, ঠিকাদার নামদারী বিগত সরকারের নেতা ও কর্মী এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের যোগসাজশে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দুর্যোগ ও ত্রান অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে টাকা আত্মসাৎ, কমিশণ বানিজ্য,অনিয়ম, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে লুটপাটে ব্যাতিব্যস্ততায় ছিলেন তিনি।
এ ছাড়া নিজের অপকর্ম ঢাকতে উপজেলা প্রশাসনের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ সহ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগনের পুন্জিভূত ক্ষোভ এর সত্যতা যাচাইয়ের পর তাকে শেষ পর্যন্ত এ পদ থেকে সরানোর আদেশ দেয়া হয় বলে জানা যায়।
এর আগে তাঁর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট বেপরোয়া আচরণের কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে ২০২২ সালে ৪ জানুয়ারীতে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ মরহুম একেএম শাহজান কামাল তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এবং ডিও লেটার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা সহ তাকে এখান থেকে সরাতে ব্যার্থ হন।
ওই সময়, সাবেক সংসদ সদস্য তার ডিউ লেটারে উল্লেখ করেন ”২০২১-২২ অর্থ বছরে উত্তরজয়পুর ইউনিয়নে চৌপল্লী পাকা রাস্তার মাথা হইতে সিরাজ মেম্বারের বাড়ি হয়ে গুজির দিঘীর পাড় পর্যন্ত এইচবিবি করণ এর কাজ অনুমোদিত হয়।
কিন্তু প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা অন্য জায়গায় সে কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল পরিশোধের নামে পুরো টাকাই আত্নসাৎ করেন।” এ ছাড়া ২০২৩ সালে আগষ্টের মাঝামাঝি সময় দুর্নীতি, অনিয়ম-লুটপাট ও বেশ কয়েকটি প্রকল্পে টাকা ভাগাভাগি এবং ৬২ লাখ টাকার আত্মসাৎ এর অভিযোগে স্থানীয় সংক্ষুদ্ব ব্যাক্তি লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট চন্দ্রগঞ্জ আদালতে মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালত এফআইআর হিসাবে গন্য করার জন্য ওসি চন্দ্রগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেন এবং জেলা আঃলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাংসদ এ্যাড.নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের রাজনৈতিক প্রভাব সহ নেতাদের নানা দেন দরবারে শেষ এ দফা থেকেও তিনি রক্ষা পেয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় আঃলীগের আস্থাভাজন হিসাবে মোশারফ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসাবে যোগ দান করেন।
এরপর থেকে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প যথা টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন কর্মসুচী, সোলার, ইজিপিপি নন ওয়জে প্রকল্প সহ এমপিদের বিশেষ বরাদ্ধের বিভিন্ন টাকার কমিশিন বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। নামে বেনামে অস্তিত্বহীন অনেক প্রকল্প গ্রহন, এক প্রকল্পের নামে একাধিক প্রকল্প তৈরী ও ভুয়া মাষ্টার রোল দিয়ে লক্ষ্মীপুরে তার দায়িত্ব পালন কালীন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উপহারের ঘর, মুক্তিযোদ্দাদের নিবাস তৈরী এবং ব্রীজ, কালভার্ট ও বিভিন্ন রাস্তা নির্মান সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে পিআইও মোশারফ নানাভাবে ঘুষ বানিজ্য আদায়ের পাশাপাশি নিজেই ঠিকাদারী ব্যাবসা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় এমপি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ মরহুম একেএম শাহজান কামাল, সাংসদ ও জেলা আঃলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ,সাংসদ ও জেলা আঃলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগের জেলা সভাপতি একেএম সালাউদ্দিন টিপু, প্রভাবশালী আঃলীগ নেতার যোগসাজসে এ দফতরটিকে দুর্নীতির সর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।
সুযোগে মোশারফ কয়েক লক্ষ টাকার সরকারি সোলার নাঙ্গলকোর্ট তার মনোহরগঞ্জের গ্রামের বাড়ীতে স্থাপন করে দুর্নীতির আরেক দৃষ্ঠান্ত সৃষ্টি করেছেন ।শুধু তাই নয়, চাকুরীর সুবাধে মোশাররফ গ্রামে আলিশান বাড়ী, ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে অডেল সম্পত্তির মালিকসহ দুর্নীতির মাধ্যমে সংগ্রহকৃত টাকা বিভিন্ন ব্যাবসায় লগ্নি করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
ফলে তাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ দেখা দিলে বর্তমানে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান টিআর, কাবিখা, কাবিটা সহ সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন ও যথাযথ তদারকি শুরু করেন। এতেই বেকে বসেন পিআইও মোশারফ। ফলে আগের মতো লুটপাটে ব্যার্থ হয়ে মোশাররফ ইউএনও সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যাক্তিদের বিব্রত ও অপদস্ত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কুৎসা রটাতে থাকে।
তাছাড়া,প্রশাসনের উর্ধ্বত্তনদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নেও লিপ্ত থাকেন তিনি। এতেই তাঁর জন্য কাল হয় এবং সরকারিভাবে দ্রুত এ ব্যাবস্থা নেয়া হয় বলে জানা যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী স্থানীয় রাজনীতিবীদ ও ছাত্র-জনতা সহ সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের শুধু বদলী নয় তার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বিভাগীয় মামলা সহ লুটপাট ও আত্নসাৎকৃত সরকারি অর্থ আদায়ে প্রচলিত আইননুযায়ী প্রশাসন এবং দুদক ব্যাবস্থা নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। (ধারাবাহিক চলবে)