নিজস্ব প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের এক ভাইস চেয়ারম্যান সরকারের প্রণোদনা উচ্চ ফলনশীল বীজ ও সার আওয়ামী লীগের কর্মী ব্যতিত অন্যদের বিতরণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ভুক্তভোগী কৃষকদের ‘বিএনপি-জামায়াত’ কর্মী আখ্যা দিয়ে প্রণোদনা প্রাপ্তির কার্ড রেখে দেন ওই চেয়ারম্যান।
অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ পাটোয়ারী। ভুক্তভোগী কৃষক একই উপজেলার হাজীরপাড়া ইউনিয়নের চর মোহাম্মদপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মনির হোসেন। অপর কৃষক একই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে আবু ছিদ্দিক।
প্রণোদনা বিতরণের কার্যক্রম শনিবার (৬ জুলাই) সকালে সাড়ে ১১ টায় উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ গোলাম ফারুক পিংকু। এরপর থেকে প্রণোদনা প্রাপ্তি কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
তবে উদ্বোধন পরবর্তী অপর ও তাঁর সহযোগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আলম আওয়ামী লীগ কর্মী ব্যতিত অন্যদের সার-বীজ না দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দুইজন কৃষকের প্রণোদনা প্রাপ্তি কার্ড রেখে দেন তারা। বিষয়টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে ঘটলেও তারা কোন প্রতিবাদ করেননি।
পরবর্তীতে ঘটনাস্থল (উপজেলা চত্তর) থেকে ওই ভাইস চেয়ারম্যান চলে গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (মেম্বার) হস্তক্ষেপে প্রণোদনা উপকরণ পায় কৃষকরা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ৬ হাজার ৫৯ জন কৃষককের মধ্যে আমন চাষে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এতে প্রত্যেক কৃষককে প্রতি বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি উচ্চ ফলনশীল আমন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষককৃষক আবু ছিদ্দিক বলেন, আজ সকালে সার-বীজ নেওয়ার জন্য উপজেলায় মেম্বারের দেওয়া কার্ড নিয়ে এসেছি। কিন্তু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগী আমাদের কার্ড আটকিয়ে রাখছে। আমরা নাকি বিএনপি-জামায়াতের লোক। এজন্য আমাদের সরকারী সার-বীজ দেওয়া হবে না। অথচ আমরাও আওয়ামী লীগ করি। সদর আসনের এমপির বাড়ির পাশে আমাদের বাড়ি। তিনি মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের কার্ডগুলো দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কৃষক মনির হোসেন বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। আমার বাবা ও দাদারা একই কাজ করেছেন। কৃষক হওয়ায় আমন চাষে কার্ড পেয়েছি। আজ উপজেলায় সার-বীজ নিতে আসলে আমাদের কার্ডগুলো ভাইস চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগী রেখে দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যদের সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সার-বীজ দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সরকার কৃষি বান্ধব বলে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত কৃষক যদি ওই সুবিধা না পায় তাহলে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। আমরা আওয়ামী লীগের কর্মী ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব হচ্ছে কৃষি খাতে সরকারের সুবিধাগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের তদারকি রাখা। আজও সেটি করেছিলাম। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম বলেন, আমন চাষে সরকার প্রণোদনা দিয়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার জন্য। নির্দিষ্ট কোন দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে বন্টনের জন্য নয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কেন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনা পরবর্তী ভুক্তভোগী কৃষকদের সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।