নিজস্ব প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুর শহরের সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণের শিডিউল না মেনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট করে ১২ ফুট ড্রেন নির্মাণের কথা। নির্মাণ করা হয়েছে তিন ফুট করে।
এছাড়া ৮০ শতাংশ পাথর ও ২০ শতাংশ বালি দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ২০ শতাংশ পাথর কমিয়ে বালি দিয়ে সাবগ্রেড তৈরি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কাজের ত্রুটি পেয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে। শিডিউল অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করতে হস্তক্ষেপ করছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনও।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে তাদের। জেলা প্রশাসক ও সড়ক বিভাগের অনুরোধে লোকসান দিয়ে কাজটি করে যাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হলে যাতায়াতে ভোগান্তি থেকেই যাবে। জনরোষে পড়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত রোববার রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানের উপস্থিতিতে ফের কাজ শুরু হয়।
এর আগে জেলা প্রশাসকসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবি ছিদ্দিক, সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু জরুরি বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, সড়কটি ১৫০ মিলিমিটার কার্পেটিং হবে। অনিয়মের সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ তদারকির মাধ্যমেই কাজ সম্পন্ন হবে। জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও সওজের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কাজটি তদারকি করবেন।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর। দক্ষিণ তেমুহনী থেকে উত্তর তেমুহনী ও ঝুমুর থেকে সওজ কার্যালয় পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ কাজটি যৌথভাবে পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স সালেহ আহমেদ। ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর মধ্যে তিনবার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়।
২০২৪ সালে দক্ষিণ তেমুহনী-উত্তর তেমুহনী সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ফুটপাতের জন্য ১৭ কোটি ৮১ লাখ ১ হাজার ৬১৪ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। মাটি কাটার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ২৭১ টাকা।
সিডিউল অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত হবে ৩৬ ফুট। একই সঙ্গে সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট করে ড্রেন নির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে সব জায়গায় নির্মাণ হয়নি নির্দিষ্ট পরিমাপে ড্রেন। সড়কে ৮০ শতাংশ পাথর ও ২০ শতাংশ বালি দেয়ার কথা রয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০ শতাংশ পাথর কমিয়ে বালি দিয়ে সাবগ্রেড তৈরি করছে।
এছাড়া সাবগ্রেড তৈরির পর কার্পেটিংয়ের জন্য ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হলেও তা করা হয়নি। সাবগ্রেড তৈরির দুই দিন না যেতেই কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইস্কান্দার মির্জা শামীম বলেন, ‘প্রাক্কলনটি ছিল ২০১৮ সালের। তখন নির্মাণসামগ্রীর দাম ছিল কম। জমি অধিগ্রহণে দুই বছর চলে যায়। এরই মধ্যে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে গেলে কাজে অনাগ্রহ প্রকাশ করা হয়। কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাজটি আবার শুরু করেছি। কাজ করতে গিয়ে আমাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। কাজটি ছেড়ে দেয়ার জন্যও বলেছি। জেলা প্রশাসন ও সওজ বিভাগের অনুরোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে আমার লোকসান হবে।’
লক্ষ্মীপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সড়ক উন্নয়নকাজ চলছে। তদন্তে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সেসব ত্রুটি শেষ করার জন্যই কাজ বন্ধ করা হয়েছিল।’
তবে ছয় ফুটের ড্রেনে তিন ফুট কেন, ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও অনেকাংশে তা দেখা যাচ্ছে না—এসব প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। পুরনো ড্রেনের সঙ্গে নতুন ড্রেন সংযুক্তের ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের বিভিন্ন স্থানে আমরা জমি বুঝে পাইনি। জমি নিয়ে সমস্যা থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই কাজটি করা হয়েছে।’