নিজস্ব প্রতিবেদক :
লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে সয়াবিন আবাদ হয়। সয়াল্যান্ড খ্যাত মেঘনা উপকূলীয় এ জেলায় এবারও ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের অধিকাংশ ফসলি জমি এখন সয়াবিনের দখলে।
যে সয়াবিন চাষকরে কৃষক বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে তাতে আজ ফুলও এসেছে। তবে বৃষ্টি না থাকায় মাটি শুকিয়ে জমিতে লবণাক্ততা তীব্র হওয়ায় চরম বিপাকেও রয়েছে কৃষক। লবণাক্ততায় ঝলসে যাচ্ছে সয়াবিনের চারা। চাষিদের অভিযোগ এর থেকে উত্তরণে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ে কোনো ধরনের ভূমিকা নেই।
উপকূলীয় এসব কৃষি এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে
যাওয়ায় প্রায় ৩০০ একর জমিতে গত ১০ বছর ধরে রবি মৌসুমে চাষাবাদ হচ্ছে না। এর মধ্যেও কিছু কিছু জমিতে চাষিরা সয়াবিনের আবাদ করেন। কিন্তু লবণের কারণে সয়াবিনের চারা ঝলসে যায়। এতে কৃষক লোকসানে পড়ায় আবাদে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে লবণাক্ততা কমবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জমি খালি পড়ে আছে। ওইসব জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে পাশের ইটভাটাগুলোতে। সামান্য কিছু জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু জমিতে চারা গজানোর হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মতো। আবার জমির কচি চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদন হয় কমলনগর ও রামগতিতে। এ মৌসুমে উন্নত জাতের (বিইউ, বিনা ও বারি) সয়াবিন আবাদ করা হয়েছে বেশি। এতে এবার প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হবে। বাজারে এ সয়াবিন কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এ বছর দাম আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া বীজের জন্য রবি মৌসুমের শুরুতে উৎপাদিত সয়াবিন প্রতি কেজি ১৫০ টাকা করে বিক্রি করেছে চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক
বলেন,আমরা প্রতি কৃষক এক একর বা দু’একর জমিতে প্রতি বছর সয়াবিন চাষ করি। এবারও করেছি। তবে এবার আমার সয়াবিনের চারাগুলো ঝলসে গেছে। বৃষ্টি নেই, নোনা মাটির কারণে ২০ শতাংশ জমির সয়াবিনের চারা ঝলসে মাঠ খালি দেখাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কেউই চাষাবাদের বিষয়ে পরামর্শ দিতে আসে না। এ ছাড়া একটি বীজও কখনো কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়নি।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, জমির তলদেশে লবণাক্ত পানি থাকলে তাপমাত্রা বেশি হলে পানি শুকিয়ে জমিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়। লবণাক্ততার কারণে সয়াবিন গাছ ঝলসে যাচ্ছে। তবে রামগতি-কমলনগরের কিছু এলাকায় এটি ঘটতে পারে। সদরের কোনো এলাকায় হচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই। মাঠপর্যায়ে গিয়ে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে হবে।