নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সঙ্গে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন মাহবুব আল হোসেন রাফি নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। তাকে বাধা দেওয়ার পরও কথা না শোনায় খাতা নিয়ে যান কর্তব্যরত শিক্ষক।
এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহ শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন রাফিসহ তার সহযোগীরা। পরে ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলনসহ অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সেমিস্টার পরীক্ষার সময় এ ঘটনা ঘটে। মাহবুব আল হোসেন রাফি ওই বিভাগের ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অন্তর্গত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ ছাত্রলীগের উপশাখার সাধারণ সম্পাদক।
শিক্ষকদের দাবি, পরীক্ষা চলাকালীন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ওই ছাত্র মোবাইল বের করে খাতায় লিখতে থাকেন। কক্ষের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষিকা তাকে নকল করতে বারণ করলেও শোনেননি রাফি।
পরে তার খাতা নিয়ে আটকে রাখলে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করেন রাফি। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ তেড়ে গিয়ে শিক্ষাকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুপুরে ক্যাম্পাসে আগুন জ্বালিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মেইন গেইট, পকেট গেইট, প্রশাসনিক ভবনের গেইট ও একাডেমিক ভবনগুলোর গেইটে তালা ঝুলিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করা হয়।
পরে এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন থেকে তাদেরকে নিভৃত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সাহানা রহমান জাগো গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, মাহবুব আল হোসেন রাফি অনৈতিকভাবে পরীক্ষার কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন, এতে শিক্ষকরা তার খাতা আটকে রাখেন।
পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে কেন খাতা নেওয়া হলো তা জানতে চান। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি শৃঙ্খলাবোর্ডে তোলার জন্য ফাইল আকারে জমা দেওয়া হবে। বাকি তথ্য রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান সুব্রত ভৌমিক জাগো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যার বিষয়টি জেনেছি। কোনো একজন ম্যাডামের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। আমি আজ ক্যাম্পাসে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমি আর কিছু জানি না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান বলেন, পরীক্ষার কক্ষে রাফির সঙ্গে মোবাইল ছিল সত্য, তবে তা বন্ধ ছিল। এ নিয়ে ওই ছাত্রের খাতা কেড়ে নেওয়া শিক্ষকের ঠিক হয়নি। পরে এ নিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করতে চেয়েছিল। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. জসীম উদ্দিন ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব আল হোসেন রাফিকে বারবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে শিক্ষকের সঙ্গে অশোভন আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।