নিজস্ব প্রতিনিধি :
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনের বজরা ও নাটেশ্বর ইউনিয়নের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহা. আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগে এ দাবি জানান তিনি।
এর আগে গত রোববার রাত ৯টায় তিনি নোয়াখালী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন জমা দেন। লিখিত অভিযোগে মোহা. আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বলেন, গত ৭ জানুয়ারি দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সোনাইমুড়ী উপজেলার ৭নং বজরা ইউনিয়ন ও ৬নং নাটেশ্বর ইউনিয়নের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কাস্টিং ভোট ছিল ৫০০ থেকে ৬০০। আমি নিজে প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার ও অ্যাপের মাধ্যমে সেই কাস্টিং ভোট সম্পর্কে জানতে পারি।
এরপর নৌকার নেতাকর্মীরা কাঁচি মার্কার এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে বের করে দেন।
পরে তারা ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে জাল সীল মারতে থাকে, যা আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা (নোয়াখালী), সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা, সোনাইমুড়ী এবং নোয়াখালী পুলিশ সুপার মহোদ্বয়কে মোবাইলে বিষয়টি জানাই।
ভোটের শেষ সময় ছিল আর মাত্র ৩০ মিনিট। এর মধ্যে কীভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে ফলাফলে ১৪০০-১৫০০ এর বেশি ভোট কাস্টিং হয়। এটাই প্রমাণ করে তারা কী পরিমান জাল ভোট দিয়েছে।
পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নোয়াখালী-২ আসনের অন্যান্য সব কেন্দ্রের কাস্টিং ভোটের সঙ্গে ৭নং বজরা ও ৬নং ন্যটেশ্বর ইউনিয়নের সকল ভোটকেন্দ্রের কাস্টিং ভোটের তুলনা করলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
তাই এই দুইটি ইউনিয়নের সব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণ এবং এ কাজে জড়িত সব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বলেন, প্রতি ঘণ্টার গৃহীত ভোটের হিসাব নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়েছে। তাহলে শেষের আধাঘন্টায় আরও তিন থেকে চারগুণ ভোট এলো কোথা থেকে? তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
এর ভিডিও ফুটেজসহ আমি জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রতিকার না পেলে উচ্চ আদালতে যাব। আমি ওই দুই ইউনিয়নে আবারও ভোটগ্রহণের দাবি জানাই।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তখনও আমরা ফলাফল ঘোষণা করিনি। অভিযোগের পর আমরা ওই দুই ইউনিয়নে ভোটের হিসাব আবারও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে ফলাফল ঘোষণা করেছি।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে ১১৮ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদ আলম পেয়েছেন ৫৬ হাজার ১৮৬টি ভোট, আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৬৩ ভোট, জাসদের নাইমুল আহসান (মশাল) পেয়েছেন ৩৬৫ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন) পেয়েছেন ২১৭ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রবিউল হোসাইন (ছড়ি) পেয়েছেন ১৫৯ ভোট, জাতীয় পার্টির তালেবুজ্জামান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৭৫২ ভোট ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কাজী সরওয়ার আলম (হাতঘড়ি) পেয়েছেন ১৬১ ভোট।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০৩টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা তিন হাজার ৩২৬টি। সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ২৯টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।